নাজমুল হুদা, হাতিয়া,নোয়াখালী
নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত এবং দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া। প্রায় ৮ লাখ জনসংখ্যার এই দ্বীপ একদিকে যেমন পর্যটনের জন্য সুপরিচিত, অন্যদিকে তেমনি সমৃদ্ধ মৎস্য আহরণের জন্য । এই দ্বীপের মধ্যে রয়েছে ছোট-বড় অনেক উপদ্বীপ। নিঝুম দ্বীপ তেমনি এই দ্বীপের অন্যতম একটি উপদ্বীপ। যার খ্যাতি এখন দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ম্যানগ্রোভ বন, মৎস্য আহরণ ও পর্যটন খাত থেকে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সত্ত্বেও হাতিয়া আজ মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার পথে।
ষাটের দশক থেকে শুরু হওয়া মেঘনার অব্যাহত ভাঙনে দিশেহারা দ্বীপবাসী। ক্রমাগত ভাঙনের ফলে ইতোমধ্যে হাতিয়ার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত বাড়িঘর হারিয়ে হাজারো পরিবার চরাঞ্চলে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কোনো কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছে হাতিয়াবাসী।
বর্ষাকালে শুরু হওয়া ভাঙন এখন সারা বছরজুড়েই চলতে থাকে। চানন্দী, নলচিরা, সুখচর ও চরঈশ্বর ইউনিয়নের হাজারো হেক্টর আবাদি জমি ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নলচিরা আর সুখচর ইউনিয়ন তো প্রায় বিলুপ্ত হওয়ার পথে। বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়া পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি।
পাশের দ্বীপ মনপুরা ও ভোলায় অনেক আগেই নদী রক্ষা ব্লক স্থাপন করা হলেও কোনো এক অজানা কারণে হাতিয়ায় এখনো সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বিগত সরকারগুলো বিভিন্ন সময় আশার বাণী শোনালেও বাস্তবে তা আলোর মুখ দেখেনি।
হাতিয়ার ৮ লাখ মানুষের প্রাণের দাবি—দ্রুত নদী রক্ষা ব্লক স্থাপন করা হোক। যদি অবিলম্বে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করা হয়, তাহলে দেশের মানচিত্র থেকে এই বিশাল ভূখণ্ড হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্বীপবাসীর আহ্বান, হাতিয়ার মাটি ও মানুষের অস্তিত্ব রক্ষায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক। নদী ভাঙন ঠেকাতে, বসতভিটা রক্ষা করতে এবং হাতিয়ার সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক খাতগুলোকে সুরক্ষা দিতে সময়োচিত ব্যবস্থা এখন সময়ের দাবি।