মোঃ আলামিন হোসেন,
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার ৩৭ লাখ টাকাসহ নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের চলনবিল গেট এলাকায় আইন শৃংখলা বাহীনির বাহিনীর হাতে আটক হয়। পরে তাকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হলেও টাকার উৎস্য প্রথমে জমি বিক্রির দাবী করলেও,জমি বিক্রি সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখাতে পারেন নি। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে জব্দকৃত ওইসব টাকার বিষয়ে বর্ননা তুলে ধরে নির্দেশনা চাইলে বিজ্ঞ আদালত টাকাগুলি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমাদানের নির্দেশ দেন।এ ঘটনা অনুসন্ধান শুরু করছে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)। বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রকল্প পাইয়ে দেয়ার কথা বলে কয়েকজন বিশ্বস্ত ঠিকাদারের কাছ থেকে গ্রহন কৃত ঘুষের টাকা সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস শেষ করে নিজ গাড়িতে করে টাকাগুলি গাইবান্ধা থেকে রাজশাহীর নিজ বাসায় ফেরার পথে টাকাসহ আটক হন।
সম্প্রতি ৫আগষ্টের পর, বর্তমান সরকার দুর্নীতি -অনিয়মের বিষয়ে সংস্কার কমিশন করে কঠোর অবস্থানে যান। এরি ধারাবাহিকতায় সরকারি ভাবে কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব বিবরনী নেয় সরকার।এই হিসাব দেয়ার পর নিজ নামে বা আত্মীয় স্বজনের নামে একাউন্টে লেনদেনে সতর্কতা অবলম্বন করে বড় লেনদেন থেতে বিরত থাকে ।তিনি সরকারী কর্মকর্তা হিসাবে দেয়া সম্পদ বিবরনীর বাহিরে সম্পদ রাখতে-তিনি স্বশরীরে টাকা গুলি নিয়ে বাড়ী ফিরছিলেন।
গাইবান্ধা জেলাতেই কর্মজীবনের ২১ বছর পার করেছেন। মাঝে একবার বদলি করা হলেও ২৩ দিনের ব্যবধানে আবারও ফিরে আসেন তিনি। এই জেলায় জেঁকে বসতে এই প্রকৌশলী ব্যবহার করেছেন সাবেক ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামীলীগ সরকারের ডেপুটি স্পিকারসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ক্ষমতাধর মন্ত্রীদের। তাই তার বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে অভিযোগ উঠলেও তিনি ধামচাপা দিয়ে বহাল তবিয়তে আছেন।
এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ছাবিউল ইসলামের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়। বর্তমানে তিনি রাজশাহী নগরের লক্ষ্মীপুরে বাড়ি করেছেন। সেখানেই বসবাস করেন। তিনি ২০০৫ সালের ২১ ডিসেম্বর উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে গাইবান্ধার সাঘাটায় যোগদান করেন। এই কর্মস্থলে টানা ১৪ বছর দায়িত্ব পালন করে পদোন্নতি পেয়ে জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী গাইবান্ধা জেলা কার্যালয়ে যোগ দেন। এ সময় তিনি সাঘাটা উপজেলায় (উপজেলা প্রকৌশলী) অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন।
এই সাঘাটার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ওই আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য ফজলে রাব্বী মিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। ছাবিউল ইসলাম সেই সময় তাকে ধর্ম আত্মীয় বানান।
তিনি সেই সুবাদর ঠিকাদারদের নিয়ে তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতেন। এ ছাড়া কোন ঠিকাদার কোন ভোট সেন্টারের খরচ বহন করবেন, তাও তিনি নির্ধারণ করে দিতেন।
সাঘাটা উপজেলার বাসিন্দা সোহাগ মিয়া বলেন, ‘আমরা ছাবিউল ইসলামকে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তেমন একটা চিনতাম না। ওনাকে আমরা ডেপুটি স্পিকারের বেটা হিসেবেই চিনতাম। ভোটের সময় উনি নিজেই ডেপুটি স্পিকারের জন্য মাঠে কাজ করতেন।’
এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ছাবিউল নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বরিশাল জেলায় যোগ দেন। সেখানে মাত্র ২৩ দিন দায়িত্ব পালন করেন। তদবির করে ওই বছরই ৬ অক্টোবর গাইবান্ধায় বদলি নেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাইবান্ধার এক ঠিকাদার বলেন, একই জেলায় দীর্ঘদিন থাকার কারণে ওই প্রকৌশলী নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। বিশেষত সব ঠিকাদারই তাঁর কাছে জিম্মি ছিলেন। কমিশন ছাড়া কোনো ফাইল সই করতেন না।
তবে ছাবিউল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন,‘কাজ ঠিক থাকলে বিল ছাড় করা হয়,ঘুষ নেয়া হয় না। টাকাগুলির উৎস সম্পর্কে তিনি আরও বলেন তাঁর বাবা মারা যাওয়ার পর জমি বিক্রির টাকা তাঁর চাচা দিয়ে গেছেন। সেগুলো তিনি বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
এদিকে টাকাসহ আটক হওয়ার পর ছাবিউলকে শুক্রবার বিকেলে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। গাড়ি থেকে জব্দ করা প্রায় ৩৭ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এর আগে এই ঘটনায় ছাবিউলকে নিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। সিংড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাজু আহমেদ এই ঘটনা তদন্ত করছেন।
এসআই রাজু আহমেদ বলেন, টাকাগুলো এলজিইডির কর্মকর্তা জমি বিক্রির টাকা বলে দাবি করলেও এর সমর্থনে কোনো কাগজপত্র জমা দিতে পারেননি। তাই টাকার বৈধতা নিরূপণের জন্য তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনে আবেদন পাঠিয়েছেন।এ ঘটনায় অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।
এদিকে আজ মঙ্গলবার অনুমতি ছাড়া কর্মস্থল ত্যাগ ও গাড়িতে অবৈধ অর্থ, গাইবান্ধা এলজিইডির ওই নির্বাহী প্রকৌশলী বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি।