সজিব শিকদার জেলা প্রতিনিধি[ বাগেরহাট ]
মৌসুমের শেষ মুহূর্তে এসে দুর্যোগে পড়েছেন পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চরের শুঁটকি পল্লীর জেলেরা। অসময়ে হঠাৎ করে উত্তাল হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগর।
গত শুক্রবার (১৪ মার্চ) থেকে সাগর অশান্ত থাকায় টানা ছয়দিন ধরে মাছধরা বন্ধ। শুঁটকি উৎপাদনকারী চারটি চরে কয়েক হাজার নৌকা ও ট্রলার শুঁটকি পল্লীর ঘাটে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে। সাগরপানে তাকিয়ে অলস সময় পার করছেন হাজার হাজার জেলে। মাছধরা বন্ধ থাকায় চরম লোকসানের আশঙ্কা করছেন মহাজন ও আড়তদাররা।
আলোরকোল শুঁটকি পল্লী থেকে বুধবার (১৯ মার্চ) দুপুরে রামপাল জেলে সমিতির সভাপতি মোতাসিন ফরাজী বলেন, ‘ছয়দিন ধরে সাগরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে। পশ্চিমা বাতাসে বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে। সাগরে যেতে না পেরে জেলেরা সবাই নিজ নিজ মহাজনের ঘরে অলস সময় কাটাচ্ছেন। এসব জেলারা সবারই তাদের মহাজনদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা অগ্রিম নিয়েছে। মাছধরা না পারলে সবই লোকসানের খাতায় চলে যাবে।’দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ মোবাইল ফোনে বলেন, ‘৮ এপ্রিল শেষ হবে পাঁচ মাসের এই শুঁটকি মৌসুম। শুরু থেকেই কয়েক দফা দুর্যোগ, ডাকাতের উৎপাত এবং জেলে অপহরণের ঘটনায় সাগরে নামতে পারেনি জেলেরা। ডাকাতের ভয়ে বহু ব্যবসায়ী চর ছেড়ে চলে গেছেন। অপহরণের ভয়ে পালিয়ে গেছেন শত শত জেলে। কিন্তু একেবারে শেষে সময় এসে আবার অশান্ত হয়ে উঠেছে সাগর। উত্তাল ঢেউয়ে সাগরে যাওয়ার উপায় নেই। মাছধরা সমস্ত নৌকা-ট্রলার কূলে অবস্থান করছে। এবছর লাভ তো দূরের কথা, আসল চালান বাঁচানোই কঠিন হয়ে পড়বে অধিকাংশ ব্যবসায়ীর জন্য
বনবিভাগের শ্যালারচর টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেষ্টার দিলিপ মজুমদার বলেন, ‘সাগর উত্তাল থাকায় জেলেরা মাছধরা বন্ধ রেখে নৌকা-ট্রলার নিয়ে শুঁটকি পল্লীর ঘাটে এবং বনের মধ্যে বিভিন্ন খালে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন। আশ্রিত জেলেদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক নজরদারি করছেন বনরক্ষীরা।’
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার বিশেষ টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ফরেষ্ট রেঞ্জার) মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘এবছর শুরু থেকেই একের পর এক দুর্যোগে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। মৌসুমের শেষেও সাগরে বৈরী আবহাওয়ার থাবা। জেলেরা মাছধরা পারছেন না। ফলে এ মৌসুমে রাজস্ব ঘাটতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ৮ এপ্রিল শেষ হবে পাঁচ মাসের শুঁটকি উৎপাদন মৌসুম।’