পবিপ্রবি প্রশাসনের নিয়োগ বাণিজ্য!
পটুয়াখালী প্রতিনিধি॥ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। জুলাই বিপ্লবে শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যদের মাত্র একজনকে নামমাত্র চাকরি দিয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রশাসন ইতোমধ্যে বিভিন্ন উচ্চপদস্থ পদে নয়জনকে অবৈধ দৈনিক মজুরী ভিত্তিক খন্ডকালীন নিয়োগ প্রদান করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, এদের মধ্যে একজন আওয়ামীলীগের দোসরকে নিয়োগ দিয়ে তাকে পূর্নবাসনে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন।
সুত্রমতে, পূর্বানুমোদন ছাড়া দৈনিক মজুরী ভিত্তিক জনবল নিয়োগ বন্ধ রাখার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের পরিপত্র থাকলেও পবিপ্রবি প্রশাসন তা অমান্য করে গত ২৭ জানুয়ারী ষষ্ঠ
গ্রেডের সহকারী অধ্যাপক পদে ড. মোঃ ইকবাল হোসেন, ড. মোঃ সগিরুল ইসলাম মজুমদার; নবম গ্রেডের প্রভাষক পদে ডাঃ মোঃ মহিবুল্লাহ, ষষ্ঠ গ্রেডের সহকারী রেজিস্ট্রার পদে আবু তাহের, সুইন আহমেদ, মোঃ মাহমুদ আল-জামান, লোকমান হোসেন (মিঠু), সহকারী পরিচালক পদে মাহমুদ হোসাইন এবং নবম গ্রেডের সেকশন অফিসার পদে এস এম মেহেদী হাসানকে দৈনিক বেতনে খন্ডকালীন নিয়োগ দিয়েছেন। নিয়োগপ্রাপ্ত এরা কেউই জুলাই বিপ্লবে শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্য নন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সাবেক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, জুলাই বিপ্লবে শহীদ পরিবারের সদস্যদের একটিমাত্র নিয়োগ এবং উচ্চপদস্থ এই অবৈধ নয়টি নিয়োগের অনুপাত দেখে আমরা লজ্জিত।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হৃদয় তারুয়া তন্ময়ের বোন মিতু তারুয়াকে লাইব্রেরি অ্যাটেনডেন্টের ২০ তম গ্রেডের পদে ২০২৪ সালের ২৪ অক্টোবর অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেয় পবিপ্রবি প্রশাসন। গত ১১ মার্চ পবিপ্রবি শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মিয়া রাসেল এবং সাবেক সাধারন সম্পাদক মনিরুল হক জনি স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, নতুনদের মধ্যে সহকারী অধ্যাপক, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ডঃ সগিরুল ইসলাম মজুমদার ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের একজন দোসর। সে ইতোপূর্বে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটে কর্মরত থাকা অবস্থায় ১৫ আগস্ট, ১৭ মার্চ সহ বিভিন্ন আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহন করেছেন এবং এগুলোর উদযাপন কমিটিতেও তার নাম ছিল । আওয়ামী লীগের মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের সাথে সগিরুল ইসলাম মজুমদারের ঘনিষ্ঠতার একাধিক ছবি রয়েছে । সর্বশেষ জুলাই বিপ্লব চলাকালীন ২০২৪ সালের ০৪ আগস্ট সগিরুল ইসলাম মজুমদার “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপর আস্থা রাখুন”- লেখা সম্বলিত ব্যানার নিয়ে মানিক মিয়া এভিনিউতে র্যালী করেছেন।
অন্যদিকে, সগিরুল ইসলাম মজুমদার নিজেকে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক (জাহাঙ্গীর-নোমান কমিটি) বলে দাবি করেছেন। এ বিষয়ে পবিপ্রবি ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মিয়া রাসেল বলেন, যে সগির আওয়ামীলীগের অনুষ্ঠানে নিয়মিত যেত এবং সর্বশেষ ফ্যাসিস্ট হাসিনার পক্ষে মানববন্ধন করেছেন, সে এখন শাহজাহান ওমর, সমশের মুবিন চৌধুরীর মত বিএনপির কেউ না।
সর্বশেষ, গত ১৯ মার্চ প্রকাশিত ২০ জন শিক্ষকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতেও দেখা গেছে নানা অসঙ্গতি। অভিযোগ রয়েছে যে, সাবেক ছাত্রদের ১১ মার্চের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর দ্রুত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন পবিপ্রবি প্রশাসন। এছাড়াও ইউজিসির সর্বশেষ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষক নিয়োগ ও পদোয়ন্ননের নীতিমালা অনুসরন না করে প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডঃ মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ইতোমধ্যে আমরা পবিপ্রবি প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি তাদের উত্তর সন্তোষজনক না হলে আমরা ব্যবস্থা নিব।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ডঃ সগিরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, আমি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (জাহাঙ্গীর-নোমান কমিটি)র ছাত্রদলের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলাম। আমি যা করেছি আমার চাকরি বাচাঁনোর জন্য করেছি। এবং আমি জুলাই আগষ্টে ছাত্রদের পক্ষে ছিলাম।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডঃ কাজী রফিকুল ইসলাম এ মুঠোফোনে (০১৭১১২৮৫৭৬৬) একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
#