বিশেষ প্রতিবেদন
যারা সৎভাবে উপার্জন করে তাদেরকে সমাজের লোকজন হেয় করে, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। আর যারা সমাজে অবৈধভাবে ইনকাম করে টাকার পাহাড় জন্মায় তাদের সম্মানিত লোক মনে করে কারণ তাদের টাকা আছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন না করলে আমাদের সমাজে সৎ লোক তৈরি করা কঠিন হয়ে যাবে। সব সময় সৎভাবে উপার্জনকারী ব্যক্তিকে উৎসাহিত করা উচিত। তাদের পাশে থাকা প্রয়োজন যাতে তারা উৎকর্মশীল হওয়ার জন্য মানসিক নির্যাতনের শিকার না হতে হয়।
এমন অনেক ব্যক্তি পাওয়া যায় সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে প্রচুর টাকার মালিক হয়ে গিয়েছে।আবার একই সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে কোনো মানুষ তিন বেলায় খেয়ে যাচ্ছে। কোনো মতে সংসার চালাচ্ছে। দিনশেষে মানুষ কার কত টাকা আছে সেই হিসেব করেই মানুষ মানুষকে মূল্যায়ন করে। এমনকি প্রায়ই সৎভাবে উপার্জনকারী ব্যক্তিকে হাসির চলে তিরস্কার করা হয় তার অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতার জন্য। কি অদ্ভুত সমাজ!
আপনি সৎভাবে উপার্জনকারী ব্যক্তিকে যথাযথভাবে উৎসাহিত না করতে পারলে, সমাজ তাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে না পারলে,সমাজে সৎ লোক তৈরি হবে না। বরং তৈরি হবে দুর্নীতিবাজ লোক। অবৈধ টাকাকে মূল্যায়নের মাপকাঠি হিসেবে ধরলে সমাজ ও রাষ্ট্র দুর্নীতিগ্ৰস্ত হবেই।
একটি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে দেশের প্রচলিত বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যবই গুলোতে সৎ ব্যক্তির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে গবেষণামূলক বিভিন্ন ধরণের প্রবন্ধ উপস্থাপন করা উচিত। শিশুদের ছোটবেলা থেকেই এই শিক্ষাটি দেওয়া প্রয়োজন যে সৎ ব্যক্তি সমাজের সবচেয়ে উপকারী ব্যক্তি ও সম্মানিত ব্যক্তি কারণ সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাদের ত্যাগ অপূরণীয়।
একদিন ঢাকায় যাচ্ছিলাম। হটাৎ আমার পাশের সিটে বসা দুইজন লোক তাদের সন্তানের ক্যারিয়ার নিয়ে আলোচনা করছিল। তাদের আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল কোন পেশায় বেশি উপার্জন করা যাবে। তাদের আলোচনায় সরকারি বা বেসরকারি বিভিন্ন পেশার নাম উঠে এসেছিল। এমনকি কোন পেশায় নির্ধারিত বেতনের বাইরে অবৈধ ইনকাম করা যায় সেটা নিয়েও আলোচনা হচ্ছিল। কিন্তু অবাক করা বিষয় তারা একবারও বলে নাই আমার ছেলেকে সমাজ ও রাষ্ট্রের সেবার জন্য চাকরিতে পাঠাচ্ছি। আমাদের পারিবারিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষাটাই দেওয়া হয় পড়ালেখা করে টাকা উপার্জন করতে হবে ও সম্মানিত ব্যক্তি হতে হবে। আদারওয়াইজ মানুষ তোমাকে মূল্যায়ন করবে না। সুতরাং এই সমাজে কিভাবে ভালো সৎকর্মশীল মানুষ তৈরি হবে! তাই পড়ালেখা করেও নৈতিক শিক্ষার অভাবে পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে সন্তানেরা।
প্রতিটি মানুষের তার সন্তানকে পড়ালেখা করানোর উদ্দেশ্যটা হওয়া উচিত সমাজ ও রাষ্ট্রের একজন উপকারী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। আদারওয়াইজ যতো বড় সরকারি কর্মকর্তা হোক তার দ্বারা উপকার না হয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনা ঘটবে। টাকার বিনিময়ে অপরাধীকে মুক্তি করে দিবে।টাকার বিনিময়ে ভূয়া মেডিকেল রিপোর্ট প্রদান করবে। সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বলে চালিয়ে যাবে। তাই আমাদের উচিত সংকর্মশীল ব্যক্তিকে উৎসাহিত করা, তাদের অনুপ্রেরণা দেওয়া। সরকারি কর্মকর্তা সৎভাবে সেবা দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি প্রদান করা।
সাখাওয়াত হোসেন
শিক্ষক ও কলামিস্ট