রিপন মিয়া সরকার , প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ৫০ টাকার জন্ম নিবন্ধন সনদে জনপ্রতি ২০০ থেকে ৫০০ টাকা আদায় করছেন ইউনিয়ন পরিষদের সচিবরা।
উপজেলায় ১৩টি ইউনিয়নের অধিকাংশ সচিব নতুন ভোটার তালিকা নিবন্ধন,ভুল নাম-ঠিকানা নাম সংশোধনকে টার্গেট করে এমন বেপোয়ারা হয়ে উঠেছেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করছেন।
এদিকে দীর্ঘদিন যাবত (গত আগষ্টের পর হতে) বিভিন্ন মামলা ও আওয়ামী লীগ ঘরনার চেয়ারম্যানরা প্রায় সবাই এলাকা ছাড়া। ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চলছে অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন প্যানেল চেয়ারম্যানরা। ইউনিয়ন পরিষদের সচিবরা ‘মেম্বার কাম প্যানেল চেয়ারম্যানদের’ তেমন পাত্তা দিতে চান না বলে বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান জানান।
এই সুযোগে ইউপি সচিবদের এখন পোয়াবারো অবস্থা। যে যেভাবে পারছেন, ধরাকে সারাজ্ঞান করে ‘উপরি’ কামাই করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে জন্মনিবন্ধন ও সংশোধনের ক্ষেত্রে অভিযোগের শেষ নেই।
কেউ প্রতিবাদ করলে তার আবেদনে ভুল করে আবার সংশোধনী দেখিয়ে কয়েক দফায় টাকা আদায় করেন। সচিবের এ বাণিজ্য নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, দেশে শিশুর জন্ম থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত সরকারি নিয়মানুয়ী জন্ম নিবন্ধনের কোনো ফি নেওয়া হয় না। তবে শিশুর ৫ বছর পর্যন্ত ২৫ টাকা ও ৫ বছরের ওপরে সব বয়সিদের ৫০ টাকা ফি নেওয়ার নিয়ম করে দিয়েছে সরকার।
তবে সরকারের এই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উপজেলার বেশকিছু সচিব ইউনিয়ন পরিষদের সরকারি ভাবে নির্ধারিত টাকার জায়গায় নিজেই নতুন নিয়ম করেছেন। সেই নিয়মে প্রতি জন্ম সনদে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা ও জন্ম নিবন্ধনে নাম ভুল হলে সংশোধন বাবদ আরো ২০০ টাকা পর্যন্ত ফি আদায় করছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
জন্ম নিবন্ধন নিতে আসা কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, জন্ম নিবন্ধন আনতে গেলে নানা কাগজপত্রের ভুল ধরেন এবং তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন।
সদর ইউনিয়ন ,ছয়ফুল্লাকান্দি,ফরদাবাদ, সোনারামপুর, পাহাড়িয়াকান্দি, তেজখালি, ছলিমাবাদসহ ১৩টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় জন্মনিবন্ধন বাণিজ্যের অভিযোগের শেষ নেই।
সদর পৌর এলাকায় সাংবাদিক আশিকুর রহমান বলেন,আমি জন্মনিবন্ধনে জন্য এ পর্যন্ত ১০ বার গিয়েছি।এখনো পাইনি।
ছয়ফুল্লাকান্দি ইউনিয়ন সাবেক আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান (বর্তমানে পলাতক ) তুষারের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবেখ্যাত মো.কামাল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছয়ফুল্লাকান্দি এলাকার জনৈক সেবা গ্রহিতা বলেন, সচীব কামাল সাহেব আমার কাছে নিবন্ধন করা ও সংশোধন বাবদ ৩ হাজার টাকা দাবী করেছেন। আমি এতো টাকা রাজি হইনি।অভিযোগের বিষয়ে ইউপি সচীব কামাল মিয়া বলেন,অভিযোগ মিথ্যা। আমার জীবনে ১’শ টাকার উপর জন্মনিবন্ধন ফী নেইনি।
দরিকান্দির ইউপি সচিব মোজাম্মেল হক বলেন, আমি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলি না। আপনারা যা খুশী লিখেন,আমার কিচ্ছু হবে না।
সদর ইউপি সচিব অপুর কাছে তার বিরুদ্ধে বেশী টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, “একেবারে মিথ্যা অভিযোগ – ৫০ টাকার জন্মনিবন্ধন ফী ১/২ হাজার টাকা কেনো নিব?”
তবে,অভিযোগকারীদের প্রায় সবাই ভয় আর আতংকে নাম পরিচয় প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বলেন, সরকারি নির্ধারিত (৫০ টাকা) ফি’র বাইরে কোনো বাড়তি টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। সচিবরা তো সরকারি বেতন পান, তাহলে বাড়তি টাকা কেনো নেবে? বিষয়টি আমি দেখছি ও বাড়তি টাকা নেওয়ার বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেব।