বিশেষ প্রতিবেদক কক্সবাজার
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য এবং নিরাপত্তা রক্ষা করতে গিয়ে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। সম্প্রতি বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক হিজড়াকে আটক করার পর আবার আলোচনায় এসেছে সৈকতে সক্রিয় সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কিছু হিজড়া জড়িত রয়েছে পতিতা ও ছিনতাই কারীদের সঙ্গে গড়ে ওঠা একাধিক সিন্ডিকেটে, যারা পর্যটকদের টার্গেট করে অভিনব কৌশলে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে।
সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে সক্রিয় হয়ে ওঠে এই চক্র। একদল নারী, যাদের অনেকে ভাসমান পতিতাবলে এরা ছড়িয়ে পড়ে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে। কেউ কেউ পর্যটকদের প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যায় নির্জন স্থানে, যেখানে আগে থেকেই ওঁৎপেতে থাকে ছিনতাইকারী দল। আর এই পুরো প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করে একদল হিজড়া, যারা পর্যটকদের ঘিরে ধরে টাকা আদায়, ভয়ভীতি দেখানো কিংবা সরাসরি ছিনতাইয়ের সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, হিজড়া পরিচয়ে থাকা এসব অপরাধীরা সৈকতের নিরাপত্তা নষ্ট করছে। কেউ কেউ আবার মাদক সেবন ও বিক্রয়ের সঙ্গেও জড়িত।
অবশেষে বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হয় কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ। সম্প্রতি পরিচালিত অভিযানে একাধিক হিজড়া আটক করে তারা। এসব অভিযানে নেতৃত্ব দেন ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। যারা হিজড়ার ছদ্মবেশে অপরাধ করছে, তারা আইনের চোখে অপরাধী। তাদের পরিচয় নেই, অপরাধই আমাদের বিবেচ্য বিষয়। সৈকতের পরিবেশ রক্ষা এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত অভিযান চলবে।
আটকের পর একাংশ হিজড়া সৈকতে মিছিল ও স্লোগান দেয়, ট্যুরিস্ট পুলিশের বিরুদ্ধে ‘বৈষম্যমূলক আচরণের’ অভিযোগ তোলে। তবে স্থানীয়রা বলছেন ভিন্ন কথা। একজন ব্যবসায়ী বলেন, সন্ধ্যার পর এরা ভয় দেখিয়ে টাকা নেয়, কেউ প্রতিবাদ করলে হট্টগোল শুরু করে দেয়।
তবে কেবল কঠোর অভিযানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না ট্যুরিস্ট পুলিশ। অপরাধ জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাওয়া হিজড়াদের জন্য পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছেন অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ।
তার ভাষায়, যদি কেউ সত্যি পরিবর্তন চায়, অপরাধ ছেড়ে ভালো পথে ফিরতে চায়, তাদের জন্য আমাদের দরজা খোলা। প্রশিক্ষণ, পুনর্বাসন বা কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে ট্যুরিস্ট পুলিশ সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, সমাজের অবহেলিত এই সম্প্রদায়ের অনেকে অসহায় ও বাস্তবতার চাপে পড়ে অপরাধে জড়িয়ে যায়। তাই তাদের পাশে দাঁড়াতে সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা সংস্থা গুলোর সঙ্গে এক যোগে কাজ করতে প্রস্তুত ট্যুরিস্ট পুলিশ।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। এই সৈকতের নিরাপত্তা রক্ষায় অপরাধীদের বিরুদ্ধে যেমন কঠোর পদক্ষেপ জরুরি, তেমনি মানবিক চিন্তা থেকে অপরাধ পথ ত্যাগকারীদের পুনর্বাসনের উদ্যোগও সময়োপযোগী। অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদের নেতৃত্বে ট্যুরিস্ট পুলিশের এই ভারসাম্যপূর্ণ উদ্যোগ এক নতুন দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ চায় এরা সকল অপরাধ থেকে মুক্ত থেকে সুন্দর সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখুক । নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক হিজড়া বলেন আমরা বাধ্য হয়ে এ কাজে জড়িয়ে পড়েছি, তাদের নেতাদের নির্দেশ মতো কাজ না করলে নেমে আসে বর্বরতা, পরিবার থেকে বিছিন্ন হওয়ায় এবং নেতাদের বর্বরতা থেকে বাচতে অনেকেই অনিচ্ছা স্বত্বেও বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এই অপরাধ বোধ দিন শেষে আমাদের ও কষ্ট দেয়, কিন্তু কি করব কোন উপায় নেই, আমাদের নিদিষ্ট কোন আয়ের উৎস নেই, মানুষের থেকে যা নিই তা দিয়েই আমাদের জীবন চলে ।
সচেতন মহল মনে করেন, এদের বিভিন্ন যুগউপযোগি প্রশিক্ষনের সমাজের মূল সূত্রে ফিরিয়ে আনা দরকার ।