1. news@www.provatibangladesh.com : বাংলাদেশ : দৈনিক প্রভাতী বাংলাদেশ
  2. info@www.provatibangladesh.com : দৈনিক প্রভাতী বাংলাদেশ :
মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
জগন্নাথপুরে বৈশাখের বোর ধান কাটার উৎসব  এসএসসি পরীক্ষার্থী অপহরণ মামলায় তারাগঞ্জ গ্রেফতার ১  অবশেষে পরিক্ষা দিতে পারবে অবহেলিত ১৩ শিক্ষার্থী ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে কমলগঞ্জে বিশাল বিক্ষোভ, হাজারো মানুষের অংশগ্রহণ নওগাঁয় পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হয়েছে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা বর্ষবরণে লক্ষ্মীপুরে বিএনপির বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা  ময়মনসিংহের প্রশাসনের উদ্যোগে বৈশাখী আনন্দ রেলী ও শুভযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে গফরগাঁওয়ে বৈশাখী উৎসবের বর্ণাঢ্য আয়োজন বাংলা নববর্ষ বরনে ফ্যাসিবাদী দূরকরণে ভিন্ন উৎসব  জুড়ীতে স্বর্ণা দাসের পরিবারকে ইয়ুথ জার্নালিস্ট কমিউনিটির বৈশাখী উপহার

বাংলা নববর্ষ সুদীর্ঘকাল ধরে বাঙালি সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক লায়ন ডা. বরুণ কুমার আচার্য

বিশেষ প্রতিবেদন
  • প্রকাশিত: রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৪২ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিবেদন 

পৃথিবীর প্রতিটি জাতিসত্তার কাছে সেই জাতির ঐতিহ্যগত নতুন বছরের সূচনা পরম পবিত্র বলে গণ্য হয়। বাঙালিও এর ব্যতিক্রম নয়। সাধারণ বাঙালি জীবনে বছরের যে কয়েকটি দিন সকল প্রকার ক্লেদ এবং গ্লানিকে ভুলিয়ে মনের অন্তঃস্থলে নতুন আনন্দের উচ্ছ্বাস জাগিয়ে তোলে, সেই দিনগুলির মধ্যে অন্যতম হলো বাংলা নববর্ষের সূচনাকাল।
বাংলা নববর্ষ সুদীর্ঘকাল ধরে প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বাঙালি সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে বসন্ত ঋতুর অন্তিম মাস চৈত্রের অবসানে বৈশাখের সূচনার মধ্যে দিয়ে বাঙালি নতুন বছরকে বরণ করে নেয়। বর্ষবরণের অনাবিল আনন্দে উদ্ভাসিত বাঙালির জীবন পুরাতন বছরের সকল দুঃখ ও গ্লানির কথা ভুলে নতুন করে বাঁচার আশায় বুক বাঁধতে থাকে। এই প্রসঙ্গেই কবি লিখেছেন:
“নিশি অবসান, ওই পুরাতন
বর্ষ হলো গত
আমি আজি ধূলিতলে এ জীর্ণ জীবন
করিলাম নত
বন্ধু হও শত্রু হও, যেখানে যে কেহ রও
ক্ষমা করো আজিকার মতো
পুরাতন বছরের সাথে
পুরাতন অপরাধ।”
দীর্ঘ বারো মাসের পাওয়া না পাওয়াকে পেছনে ফেলে নতুন আশার আলো নিয়ে আসে বছরের প্রথম দিন। এদিনে পুরনো বছরের ব্যর্থতা, নৈরাশ্য, ক্লেদ-গ্লানি ভুলে গিয়ে নতুন ভাবে নতুন পথ চলার শুরু হয় স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশায়।
বাংলা সনের ইতিহাস সম্পর্কে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত রয়েছে। কোনো কোনো ঐতিহাসিক মনে করেন সৌর পঞ্জিকা অনুসারে বহুকাল আগে থেকেই সৌর বছরের প্রথম দিন বাংলা, আসাম, কেরালা, মনিপুর, নেপাল ইত্যাদি বিভিন্ন ভারতীয় প্রদেশে মূলত ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে নববর্ষ পালিত হতো।অন্যদিকে আবার বহু ঐতিহাসিক মনে করেন যে বাংলা বর্ষপঞ্জিকার পরিমার্জন-এর মাধ্যমে খাজনা আদায়ের ব্যবস্থাকে একটি সুষ্ঠুরূপ দেওয়ার জন্য মুঘল সম্রাট আকবর সৌর পঞ্জিকা এবং হিজরি সনের মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিকার প্রচলন করেন। কিন্তু বহু ঐতিহাসিক আবার এই দাবিকে নাকচ করে দিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিকে হিন্দু ঐতিহ্যের বিক্রমী দিনপঞ্জীর সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করেন।
একথা সত্য যে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে আকবরের শাসনকালের বহু আগেও বাংলা বর্ষপঞ্জিকা এবং নববর্ষ উদযাপনের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। সেজন্য আকবরকে বাংলা বর্ষপঞ্জির উদ্ভাবক বলে ধরে নেওয়া যুক্তিসম্মত হবে না। আধুনিক গবেষণার ফলে মনে করা হয় গুপ্তযুগীয় বঙ্গসম্রাট শশাঙ্কের শাসনকালেই বঙ্গাব্দের সূচনা হয়।
মূলত বাংলা নববর্ষের কথা বলতেই সর্বপ্রথম যে দিনটির কথা আমাদের মনে আসে তা হল পহেলা বৈশাখ। এই দিনটি বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম দিন। এই দিনে দেশধর্মনির্বিশেষে সমগ্র বাঙালি জাতি নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার আনন্দে মেতে ওঠে। পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ তো বটেই তার সাথে ত্রিপুরা এবং আসাম রাজ্যের কিছু অংশেও বাংলা নববর্ষ মহা ধুমধাম সহকারে পালিত হয়।সাধারণভাবে গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী অনুসারে প্রতি বছর ১৪ই এপ্রিল বাংলাদেশে নববর্ষ পালিত হয়ে থাকে। বাঙালি এই সময়ে মেতে ওঠে নানা প্রকার উৎসবে। হালখাতা, বিভিন্ন শোভাযাত্রা, নানা ধরনের মেলা ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে দিনটি উদ্যাপন করা হয়। একে অপরকে শুভ নববর্ষ অভিবাদন জানিয়ে সকলের মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করে বাঙালি বছর শুরু করে। আর নববর্ষ প্রতিটি বাঙালির জীবনের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনটিতে বাঙালি পৃথিবীর যে কোণেই থাকুক সে তার জাতীয় ঐতিহ্য উদযাপনে মেতে ওঠে। এই দিনটিকে কেন্দ্র করে সর্বস্তরের বাঙালিদের মধ্যে কিছু বিশেষ প্রথা প্রচলিত রয়েছে। যেমন এই দিনে বাঙালি পুরুষেরা সাধারণত পাঞ্জাবি ও ধুতি এবং মহিলারা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক শাড়িতে সেজে ওঠে।তাছাড়া এই দিনে বাঙালি ঘরে ঘরে পান্তা-ইলিশ বিভিন্ন রকমের ভাজা খাওয়ারও প্রচলন রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ তথা বাংলাদেশ এই দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে মহা আনন্দ সহকারে উদযাপন করে। চারিদিকে পরম আনন্দের পরিবেশে বিভিন্ন মেলা ও উৎসব বাঙালি জাতির মানুষ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। তাছাড়া সংস্কৃতিপ্রিয় বাঙালি জাতির কাছে এই দিনটি নিজেদের সংস্কৃতি চর্চার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এছাড়াও বাংলা লোকায়ত সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখে বাংলার বিভিন্ন উৎসব। সেই সকল উৎসবের মধ্যে বাংলা নববর্ষ উদযাপনকে কেন্দ্র করে আয়োজিত বৈশাখী মেলা অন্যতম একটি। বাংলাদেশের নগরায়নের পরিবেশেও এখনো এই মেলা আয়োজিত হয়।বিভিন্ন গ্রাম থেকে শিল্পীরা তাঁদের আঞ্চলিক শিল্পকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য এই মেলায় নিয়ে আসেন। বাংলার গ্রামীণ পটচিত্র, তথা বিভিন্ন লোকগান, লোকনৃত্য ইত্যাদি এই মেলাতে স্বকীয় মর্যাদা লাভ করে। নববর্ষের আনন্দ উদযাপনের মাধ্যমে বাংলার হারিয়ে যেতে বসা আঞ্চলিক সংস্কৃতিকে মর্যাদা দান এবং পুনরুজ্জীবনের প্রয়াস এই মেলার মধ্যে দিয়ে লক্ষ করা যায়। সাধারণত বাঙালির নববর্ষ উদযাপনকে স্বাভাবিক আপাতদৃষ্টিতে অগণিত উৎসবের একটি সুষ্ঠু সমাহার বলে মনে হলেও বাঙালির জীবনে নববর্ষ উদযাপনের সার্বিক গুরুত্ব অপরিসীম। সমগ্র একটি বছর ধরে মানুষের জীবনে যে মানসিক ক্লান্তি, গ্লানি ও হতাশা জন্ম নেয় সেগুলি থেকে মুক্তির পথ রচনাতেই উৎসবের সার্থকতা। বাঙালির নববর্ষ উদযাপন এক্ষেত্রে কোনো ব্যতিক্রম নয়।বিভিন্ন উৎসবের মধ্য দিয়ে নববর্ষ পালন করে বাঙালি পুরনো বছরের সকল ক্লেদ, গ্লানি এবং জীর্ণতাকে বিসর্জন দিয়ে প্রকৃতপক্ষে নতুন জীবনের আশ্বাসকেই বরণ করে নেয়। তাছাড়া নববর্ষ উদযাপনের মধ্য দিয়ে সকল বাঙালির মধ্যে গড়ে ওঠে এক অপূর্ব স্বজাত্যবোধ, বেঁচে থাকে বাঙালিয়ানা। বিভিন্ন উৎসবের পালনের মধ্যে দিয়ে বাংলার অগণিত মূল্যবান লোকসংস্কৃতি বিশ্বের দরবারে পরিচিতি পায়। পৃথিবীজুড়ে সকল বাঙালির মধ্যে ঐক্যগত মেলবন্ধনের সেতু রচিত হয়। অস্বীকার করার উপায় নাই যে, বাংলা নববর্ষ হল বাঙালির বাঙালিত্বকে উদযাপন করার সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতির মধ্যে যাতে কোনোভাবেই অপসংস্কৃতির কুপ্রভাব প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে প্রতিটি স্তরে সকল বাঙালিকে সচেতন হতে হবে।বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে নববর্ষ উদযাপন পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের সার্বজনীন উৎসবে। পহেলা বৈশাখের ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আয়োজনে মেতে ওঠে সারা দেশ। কিন্তু বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে এখন চলছে করোনাকাল। মানুষের পৃথিবীতে এখন চলছে অনিশ্চিত সময়।আর তাই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পহেলা বৈশাখের সমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এবার তাই কোনো রকম আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই নতুন বর্ষকে বরণ করে নেওয়া হবে।নববর্ষ উদযাপনের মধ্য দিয়ে বাঙালির বাঙালিত্ব বিশ্বায়িত হোক, বাঙালি সংস্কৃতি মর্যাদা পাক বিশ্বের দরবারে, আধুনিক ভোগবিলাসমূলক জীবন দর্শন ত্যাগ করে আপন আত্মা ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধির দিকে বাঙালি যত্নবান হয়ে উঠুক এটুকুই বাঞ্ছনীয়। নববর্ষে বাঙালিত্ব এবং বাঙালি সংস্কৃতির পবিত্র উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জীবনের সকল অন্ধকার দূরীভূত হয়ে নতুন বছর ভরে উঠুক নতুন জীবনের আশার আলোয়:“অসতো মা সৎময়,তমসো মা জ্যোতির্ময়,
মৃত্যোর্মা অমৃতংময়,ওঁ শান্তি:, ওঁ শান্তি:।সকলের প্রতি বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা।: প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট ও মরমী গবেষক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট