এ বি এম রব্বানী বাপ্পি স্টাফ রিপোর্টার
রাজধানীর রামপুরায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে এক লাইনম্যানের মৃত্যুর ঘটনায় ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। একইসঙ্গে বাতিল করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক সুপারভাইজারের নিয়োগ।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ডিপিডিসির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (এইচআর) নূর কামরুন নাহারের স্বাক্ষরিত পৃথক তিনটি পরিপত্রে এ বরখাস্তের আদেশ জারি করা হয়।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাছির উদ্দিন (আইডি: ১১২৫৯) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্বে) মো. মাহে আলম (আইডি: ১১৪৮৩)• সহকারী প্রকৌশলী শেখ আবেদ আলী (আইডি: ১১৪৩২)
তাঁদেরকে ডিপিডিসি এমপ্লয়িজ সার্ভিস রুলস, ২০১৭-এর ৭.৬ ধারা অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত করে নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। বরখাস্তকালীন সময়ে তাঁরা খোরপোষ ভাতা পাবেন এবং নির্ধারিত দপ্তরে নিয়মিত উপস্থিত থাকতে হবে। কোনো অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়াও নিষিদ্ধ।
এছাড়া, একই ঘটনায় বাতিল করা হয়েছে মগবাজার ডিভিশনের বাৎসরিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তামিম ইন্টারন্যাশনালের সুপারভাইজার আরিফ বিল্লাহর নিয়োগ।
গত ৯ এপ্রিল বিকেলে পশ্চিম রামপুরার ১৫/১৫ নম্বর ঠিকানায় নতুন সংযোগের সময় এলটি লাইনে কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান লাইনম্যান কামরান হোসেন। তিনি তামিম ইন্টারন্যাশনালের কর্মী ছিলেন। দুর্ঘটনার পর ডিপিডিসি ও বিদ্যুৎ বিভাগ দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে।
ডিপিডিসির অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদনে কোনো প্রকৌশলীর প্রত্যক্ষ দায় চিহ্নিত না হলেও কিছু সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) কিউ এম শফিকুল ইসলাম বলেন, “১১ কেভি লাইনে কাজ করার সময় সাধারণত সঞ্চালন লাইন বন্ধ করার প্রয়োজন হয় না। তবে বিদ্যুৎকর্মীরা প্রয়োজন মনে করলে নির্বাহী প্রকৌশলীর অনুমোদনক্রমে তা বন্ধ করতে পারেন। আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই যে, ওইদিন লাইন বন্ধের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল।”
তবে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কেন এই তিন প্রকৌশলীকে বরখাস্ত করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবে নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) দপ্তর।” উল্লেখ্য, নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) সোনামনি চাকমা ছুটিতে থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এই বরখাস্তের ঘটনায় ডিপিডিসির অভ্যন্তরে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রকৌশলী জানিয়েছেন, তাঁরা বুধবারের মধ্যে কর্তৃপক্ষের কাছে এ সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা চাইবেন। তাঁদের বক্তব্য, “প্রতিদিন যদি সংযোগ বা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নকরণের সময় সঞ্চালন লাইন বন্ধ করতে হয়, তাহলে দিনে ১০-১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না। এতে গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়বেন।”
প্রকৌশলীদের অভিযোগ, সরকারের ঘনিষ্ঠ এক নির্বাহী পরিচালক এবং প্রশাসন দপ্তরের দুই শীর্ষ কর্মকর্তার প্রভাবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাঁদের ভুল পরামর্শেই টেকনিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকা বর্তমান অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছ থেকে বরখাস্তের অনুমোদন নেওয়া হয়।
তাঁদের দাবি, এ ধরনের সিদ্ধান্ত ডিপিডিসি মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করছে এবং দ্রুত আদেশ প্রত্যাহার না করা হলে তাঁরা মন্ত্রণালয়ের শরণাপন্ন হবেন।