মোঃ দোয়েল আহমেদ বাগমারা উপজেলা প্রতিনিধি
“লিবিয়ায় বন্দী ২৭ বাংলাদেশী যুবকের দেশে ফেরার
আকুতি”-দেশব্যাপী চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় বিদেশে চাকুরী দেওয়ার লোভে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে জিম্মি ও নির্যাতন করে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের মূল হোতা’কে নঁওগা থেকে গ্রেফতার
১। র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার, চাঁদাবাজ, অবৈধ দখলদার, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী, ধর্ষক, প্রতারকদের গ্রেফতার করে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সদা তৎপর রয়েছে র্যাব।
২। মামলার এজাহার সুত্রে জানা যায়, ভিকটিম মোঃ ইয়াকুব আলী (৩৮), পিতা-মৃত ইনজল হোসেন, সাং-ভোগরায়, সড়া, থানা-সদর, জেলা-কুড়িগ্রাম এর সাথে বিগত ০২ (দুই) বছর পূর্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ১নং আসামী জাহিদ হোসেন (২৭) এর সাথে পরিচয় হয়। পরিচয় সূত্রে আলাপ চারিতায় সে বাদীকে জানায় যে, সে ইতালী প্রবাসী। ইতালীতে তার নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাংলাদেশের অনেক লোক তার মাধ্যমে ইতালিতে গিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইতালীর শ্রম বাজার, উচ্চ বেতন, শ্রমিকদের বিভিন্ন প্রকার সুযোগ সুবিধা ইত্যাদি আকর্ষনীয় বিষয়ে বাদীকে পলোভন দিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রলুব্ধ করে। তাকে বিশ্বাসের মাধ্যমে বাদীকে সে তাহার পিতা মোঃএহরাম সরদার (৪০) ও সম্পর্কে চাচা বাবু মোল্লা (৫২) দ্বয়ের সাথে যোগাযোগ করতে বললে বাদী তাদের সাথে যোগাযোগ করে বিগত-১০/০৮/২০২৩ তারিখ ২নং আসামী মোঃ এহরাম সরদার(৪০) এর বাসায় যাই। একই তারিখে জাহিদ হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনের ভিডিও কলে ভার্চুয়ালী আলোচনার মাধ্যমে ইতালী যাওয়ার খরচ বাবদ ২০,০০,০০০/- টাকার প্যাকেজে ধার্য্য করে। তার মধ্যে ৫,০০,০০০/- টাকা অগ্রীম এবং অবশিষ্ট ১৫,০০,০০০/- টাকা ইতালী পৌছে কাজে যোগদান করার প্রথম সপ্তাহেই বাংলাদেশে অবস্থানরত ২নং আসামীর কাছে জমা দেয়ার আলাপ চুড়ান্ত হয়। অগ্রীম ৫,০০,০০০/- টাকা পরিশোধ করার ০৩ মাসের মধ্যে ১নং আসামী জাহিদ বাদীকে ঢাকা হতে দুবাই এবং দুবাই হতে ইতালী লইয়া যাইবে। এরই ধারাবাহিকতায় বাদী সরল বিশ্বাসে গত ১০/০৮/২০২৩ ইং তারিখ সময় ০৩:০০ ঘটিকায় ২নং আসামী মোঃএহরাম সরদার এর বসতবাড়িতে গিয়ে ৩নং আসামীর উপস্থিতিতে নগদ ১,০০,০০০/- টাকা প্রদান করে এবং অবশিষ্ট ৪,০০,০০০/- টাকা নেওয়ার জন্য বাদীর বাড়ীতে দাওয়াত করিলে ২ ও ৩নং আসামী সম্মত হয়। সেই মোতাবেক গত-০১/০৯/২০২৩ তারিখ বেলা অনুমান-২.৩০ ঘটিকার সময় বাদীর বাড়িতে ৪,০০,০০০/- টাকা ও পাসপোর্ট ২নং আসামীর অনুরোধে ৩নং আসামী বাবু মোল্লার হাতে প্রদান করে। ১নং আসামীর সাথে ভার্চুয়ালী আলাপ হয় ও পূর্বের ১,০০,০০০/-+৪,০০,০০০/-=৫,০০,০০০/-টাকা গ্রহন করার বিষয়টি ২ ও ৩নং আসামীদ্বয় ১নং আসামীকে নিশ্চিত করে। ইহার একপর্যায়ে ১নং আসামী বাদীকে ফ্লাইট এর দিন, তারিখ ও সময় নিশ্চিত করে ৬নং আসামী মোঃ আব্দুল মান্নান (৫০) এর মোবাইল নং +২২৭৮৬২৬২৫৭১ দেয় এবং জানায় যে, ঢাকা শাহজালাল বিমান বন্দর হতে ফ্লাইটে তার আরো ২৬ জন লোক যাইবে, সবাইকে ৬নং আসামী গাইড করে সঙ্গে নিয়ে যাবে। নির্ধারিত দিন ও সময়ে বাদীর সাথে অন্যান্য ভুক্তভোগীদের সাক্ষাত হয়। তারপর দুবাইগামী এমিরাত এয়ার লাইন্সের একটি ফ্লাইটে গত ২৪/০৯/২০২৩ তারিখ বাদীসহ ২৭ জন ভুক্তভোগী দুবাই পৌছাই। দুবাই হতে ফ্লাইটে নাইজার নিয়ে সড়ক পথে আলজেরিয়া যাওয়ার পর আলজেরিয়া পুলিশ তাদের সকলকেই ধরে নিয়ে গেলে তাহারা ২১ দিন জেল খাটে। জেল হতে মুক্তি পাওয়ায় পর ৬নং আসামী মোঃ আব্দুল মান্নানসহ ১নং আসামী জাহিদ তাদের সকলকেই নিয়ন্ত্রন নেয়। ১-৬নং আসামী তাদেরকে আলজেরিয়া হতে সড়ক পথে তিউনিশিয়া নেয়। তিউনিশিয়া হতে লিবিয়া নিয়ে তাদের সকলকেই একটি বাড়িতে জিম্মি করে ১নং আসামী মূলহোতা জাহিদের নের্তেৃত্বে ৬-১০ নং আসামীগন বাদী ও অন্যান্য জিম্মিদের অমানষিকভাবে নির্যাতন করে ও পড়নের কাপড় খুলে বিবস্ত্র করে ছবি তুলে এবং ভিডিও ধারণ করে দেশে তাদের পরিবারের সদস্যদের নিকট পাঠায়। সেই সাথে খুন করার হুমকীদিয়ে আসামীরা বাদীর বড় ভাই ও স্ত্রী এর নিকট ৫০,০০,০০০/- টাকা মুক্তিপন দাবী করে। বাদীর বাবা মা না থাকায় তার স্ত্রী ও ভাইয়েরা তার জীবন বাঁচানোর জন্য ও উদ্ধারের জন্য ১নং আসামী সহ ৬-১০ নং আসামীদের দেয়া মোবাইল ব্যাংকিং এর বিকাশ, নগদ, ইসলামী ব্যাংক, ডাচ্ বাংলা ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকের একাউন্টে ৩০,০০,০০০/- (ত্রিশ লক্ষ) টাকা প্রেরণ করে। এছাড়া ৭নং আসামী শওকত (লিবিয়া প্রবাসী) এর ছোট বোন ও ভাই ৪/৫নং আসামীর কাছেও ইসলামী ব্যাংক ও বিকাশ একাউন্টের মাধ্যমে ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকা পাঠায়। আসামীগন একই উদ্দেশ্যে বাদীকে ইতালী পাঠানোর প্রলোভন দিয়ে সরল বিশ্বাষ জন্মাইয়া প্রতারণার মাধ্যমে ও কৌশলে অপহরণ করতঃ খুন করার হুমকী ও ভীতির মাধ্যমে বাদীর পরিবারের নিকট হতে মোট (৫,০০,০০০/- +৩০,০০,০০০/- +৫,০০,০০০/-)=৪০,০০,০০০/- (চল্লিশ লক্ষ) টাকা প্রতারণা ও মক্তিপণ বাবদ আদায় করে। বাদী অন্যান্য ভুক্তভোগীদের নিয়ে আসমীগনের বিরুদ্ধে মুক্তিপণ দাবী করার সংবাদ বাংলাদেশের বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্টিং মিডিয়ায় প্রকাশ ও প্রচার হওয়ায় লিবিয়ায় অবস্থিত দুতাবাসে কর্মরত মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মোঃ খাইরুল বাশার তাদের উদ্ধার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়। বাদী ০৯ জানুয়ারী ২০২৫ তারিখ নিজ বাড়িতে ফেরৎ এসে সর্বস্ব হারিয়ে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরে মামলা করে।
যা কুড়িগ্রাম সদর থানার মামলা নং-১৭, তারিখ-২৫/০৩/২০২৫, ধারাঃ ৪০৬/৪২০/৩৬৫/৩৬৮/৩৮৬/৩৮৭/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০। উল্লেখিত মামলার প্রেক্ষিতে আসামীদের’কে গ্রেফতারের অভিযানে নামে র্যাব।
৩। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৫, রাজশাহী চৌকস আভিযানিক দল অভিযান পরিচালনা করে অদ্য ২৪ এপ্রিল ২০২৫ তারিখ সময়-২০.৩০ ঘটিকায় নওগা জেলার রানীনগর থানাধীন সিংগারা পাড়া এলাকায় নিজ বসতবাড়ী হতে মুক্তিপন আদায় কারী চক্রের মূলহোতা ১নং আসামী জাহিদ হোসেন (২৭)’কে গ্রেফতার করে।
৪। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী উক্ত ঘটনার সাথে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে কুড়িগ্রাম সদর থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন।