রিপোর্টার:আবির হোসেন সান (কক্সবাজার)
মিয়ানমারের বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) তৎপরতায় কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদীতে মাছ ধরতে যেতে পারছেন না স্থানীয় জেলেরা। গত পাঁচ মাসে নদী ও সমুদ্র থেকে ১৫১ জন জেলেকে অপহরণ করেছে এই গোষ্ঠী। সর্বশেষ গত ৮ এপ্রিল ২৩ জন জেলেকে চারটি ট্রলারসহ ধরে নিয়ে গেছে তারা। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছেন টেকনাফের অন্তত চার শতাধিক ট্রলারের তিন হাজার জেলে।
স্থানীয় জেলেরা জানান, রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ সেনাবাহিনীর হাত থেকে আরাকান আর্মির দখলে যাওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় এই গোষ্ঠীর আগ্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়েছে। তারা দ্রুতগতির স্পিডবোটে নাফ নদীতে প্রবেশ করে জেলেদের ট্রলার আটক করে অপহরণ করছে। এই আতঙ্কে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ট্রলারগুলো নদীতে নামছে না।
টেকনাফ উপজেলার সেন্ট মার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপ সংলগ্ন মৌলভীরশীল এলাকা থেকে ৮ এপ্রিল অপহৃত হওয়া ২৩ জেলের মধ্যে পাঁচজন ছিলেন আবদুল শুক্কুরের ট্রলারে, ছয়জন মোহাম্মদ শাওনের ট্রলারে এবং ১২ জন ছিলেন আবদুল হাকিমের দুটি ট্রলারে। তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।
সম্প্রতি বন্দিদশা থেকে ফিরে আসা টেকনাফের কয়েকজন জেলে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়া ও নিয়মিত যোগাযোগের পথ সৃষ্টি করতেই আরাকান আর্মি নাফ নদী থেকে বাংলাদেশি জেলেদের অপহরণ করছে। রাখাইনে বন্দী থাকার সময় আরাকান আর্মির সদস্যরা তাদের কাছে এমন ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন।
ট্রলারের জেলে আবদুল আমিন, নুর আলম, মোহাম্মদ হোসেন ও রিয়াজ উদ্দিনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, আরাকান আর্মির অপহরণের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে ভয় পাচ্ছেন। জেলেদের পরিবার পরিজন প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তিন হাজারের বেশি জেলে অর্থসংকটে পড়েছেন। সংসার চালাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা এর দীর্ঘমেয়াদি সমাধান চাই।
টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, গত ৮ ডিসেম্বর মংডু টাউন দখলের পর আরাকান আর্মির তৎপরতা বেড়ে যায়। এখন পর্যন্ত ১৫১ জন জেলে অপহৃত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩৪ জনকে বিজিবির প্রচেষ্টায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। বাকি জেলেদের উদ্ধারে কাজ চলছে।
তিনি আরও জানান, আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। কিছুদিনের মধ্যে ভালো খবর পাওয়া যেতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, মিয়ানমারের পক্ষ থেকে রাখাইন রাজ্যে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সে কারণে জেলেদের সতর্ক করা হয়েছে যেন তারা অনিচ্ছাকৃতভাবে মিয়ানমারের জলসীমায় না ঢুকে পড়েন। তবু অপহরণের ঘটনা ঘটছে, বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে।
এদিকে সরকার ঘোষিত ৫৮ দিনের সামুদ্রিক মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা ১৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর হলেও, এর আগেই মাছ ধরা বন্ধ হওয়ায় জেলেপাড়ায় দেখা দিয়েছে চরম অর্থসংকট। শাহপরীর দ্বীপ, জালিয়াপাড়া ও খায়ুকখালী ঘাটে কয়েক শতাধিক ট্রলার এখন নোঙর করে পড়ে আছে। জেলেরা জাল মেরামত ও ছোটখাটো কাজ করে দিন কাটাচ্ছেন।