বিশেষ প্রতিবেদক
কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধদের প্রাচীনতম উৎসব হিসেবে সুপরিচিত স্বর্গপূরী উৎসব । এতে সকল সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষের অংশ গ্রহনে সম্প্রীতির মিলন মেলায় পরিনত হয়। শুক্র বার দিনব্যাপী উৎসব মুখর পরিবেশে এ উৎসব সম্পন্ন হয়।
এ উপলক্ষে দিনব্যাপী আয়োজিত ধর্ম সভায় সভাপতিত্ব করেন- চট্টগ্রামের চন্দনাইশ জামিজুরি সুমনাচার বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শীল রক্ষিত মহাথেরো। অনুষ্ঠানের আশীর্বাদক ছিলেন রামু প্রজ্ঞামিত্র বন বিহারের মহা-পরিচালক বিজয় রক্ষিত মহাথেরো। প্রধান ধর্মদেশক ছিলেন চট্টগ্রামের সুচিয়া সূখানন্দ বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ অতুলানন্দ মহাথেরো।
প্রধান জ্ঞাতির ধর্মদেশনা করেন বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ, ভূবণ শান্তি একশ ফুট সিংহ শয্যা গৌতম বুদ্ধ মুর্তির প্রতিষ্ঠাতা করুণাশ্রী মহাথেরো। স্বাগত ও উদ্বোধনী ধর্ম দেশনা করেন প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারের অধ্যক্ষ শীলমিত্র থেরো। সভায় বিশেষ অতিথির ধর্ম দেশনা করেন- কক্সবাজার উ:কুশল্ল্যা বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ জ্ঞান প্রিয় মহাথেরো, দীপঙ্কর মহাথেরো, শীল প্রিয় থেরো, ধর্মানন্দ থেরো, ধর্মপ্রিয় থেরো, নিরোদানন্দ থেরো, প্রজ্ঞাসত্য ভিক্ষু, প্রজ্ঞা বিনয় ভিক্ষু, প্রজ্ঞাপাল ভিক্ষু, প্রজ্ঞা প্রিয় ভিক্ষু।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন রামু জোয়ারিয়া নালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল শামসুদ্দিন আহমদ প্রিন্স, উপজেলা জন স্বাস্থ্য প্রকৌশলী ক্যাছাই মং চাক।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন চকরিয়া কেন্দ্রীয় জেতবন বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞামোদিতা থেরো। পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন কল্যাণ বড়ুয়া।
অনুষ্ঠানে আগত ভিক্ষু-সংঘ ও অতিথিদের শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন উদযাপন পরিষদের কর্মকর্তা বাবুল বড়ুয়া, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য রনজিত বড়ুয়া, বিহার পরিচালনা কমিটির কার্যকরী সভাপতি তরুণ বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক টিটু বড়ুয়া, বিমুক্তি বিদর্শণ ভাবনা কেন্দ্র পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সীপন বড়ুয়া।
স্বর্গ পুরী উৎসব ও বৌদ্ধ মহা সম্মেলন উদযাপন পরিষদের দিন ব্যাপী কর্মসূচীর মধ্যে ছিল- শনিবার ভোরে প্রভাত ফেরি সহকারে বুদ্ধ পুজা, সকালে অষ্ট পরিস্কারসহ মহা সংঘ দান, মহতী ধর্ম সভা, ভিক্ষু সংঘের পিন্ডদান, অতিথি ভোজন, দুপুরে স্বর্গ পুরী উদ্বোধন, বিকালে স্বর্গ পূরী মেলা, ধর্মালোচনা সভা, সন্ধ্যায় স্বর্গ পূরী উৎসর্গ, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, প্রয়াত ধর্ম গুরু প্রজ্ঞামিত্র মহাথেরো এবং প্রয়াত সারমিত্র মহাথরোর নির্বাণ সুখ কামনা ও বাংলাদেশ সহ বিশ্ব শান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা।
স্বর্গ পুরী উৎসবে উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞা মিত্র বনবিহারে যুব সমাজ কীর্তনীয়া নৃত্যদল, উখিয়ার ঘোনা জেতবন বিহার কীর্তনীয়া নৃত্যদল, শ্রীকুল গ্রামের বৌদ্ধ সমাজ কীর্তনীয়া নৃত্য দল, রাংকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহারের কীর্তনীয়া নৃত্য দল বিভিন্ন মুখোশ পরিধান করে, রঙমেখে, শংসেজে নেচে গেয়ে বুদ্ধ কীর্তন পরিবেশনের মাধ্যমে স্বর্গ পুরী উৎসবের ব্যুহচক্র প্রদক্ষিন করেন।
উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী প্রীতম বড়ুয়া অর্থ ও শিল্পী সুস্নীগ্ধা বড়ুয়া ইভা, তবলায় ছিলেন রাজীব বড়ুয়া।
প্রজ্ঞামিত্র বন বিহারের অধ্যক্ষ শীল মিত্র থেরো জানান- রামুর স্বর্গ পুরী উৎসবটি কালের সংস্কৃতির একটি সমৃদ্ধ অংশে পরিণত হয়েছে। এই উৎসবের মাধ্যমে মানুষকে মূলত জীবদ্দশায় মানুষ যে কর্ম করে সেই কর্ম অনুযায়ী বিভিন্ন কুলে তার জন্মান্তর ঘটতে পারে এমন ধারণা দেওয়া হয় ।
সংসারে মানুষ জন্ম-মৃত্যুর গোলক ধাধাঁয় পড়ে ভবচক্রে ঘুরতে ঘুরতে কখনো স্বর্গও লাভ করতে পারে। কিন্তু সেখান থেকেও নির্দিষ্ট একটা সময়ের পরে তাকে চ্যুত হতে হয়। নিজ নিজ কর্ম গুণে বা কর্ম দোষে মানুষ বিভিন্ন কুলে জন্ম গ্রহণ করছে এমন বৌদ্ধিক ধারণা থেকেই বিগত ৩৮ বছর পূর্বে বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু প্রজ্ঞামিত্র মহাথেরো উক্ত স্বর্গ পুরী উৎসবের সূচনা করেছিলেন। সে থেকে আজ পর্যন্ত বাংলা নববর্ষে বৈশাখের প্রথম সপ্তাহে এ স্বর্গ পূরী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। উৎসবে বৌদ্ধদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহনে স্বর্গ পূরী উৎসব সম্প্রীতির মহা মিলন মেলায় পরিনত হয়।
স্বর্গ পূরী উৎসব ও বৌদ্ধ মহা সম্মেলনে বিভিন্ন বৌদ্ধ পল্লী থেকে দলীয় ভাবে বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে নেচে গেয়ে বৌদ্ধ কীর্তন সহকারে স্বর্গ পুরী উৎসবে হাজার হাজার পুণ্যার্থীর অংশ গ্রহনে স্বর্গ পূরী উৎসব ও বৌদ্ধ মহা সম্মেলন সম্পন্ন হয়।